সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১০

জাপানের ডায়েরীঃ প্রবাসে বাংলাদেশকে খোঁজা

আমি মনে করি, দেশে প্রতি সবচেয়ে বেশি টান অনুভব হয় কেউ যদি একবার দেশের বাহিরে আসে। গরীব আর নানা অপ্রাপ্তির পরেও জন্মভূমিতে যে অনাবিল আনন্দ, সেটা প্রবাস জীবনেই টের পাওয়া যায়। তবে, হ্যাঁ এর ব্যতিক্রমও আছে, অনেকের কাছে আবার ৩য় বিশ্বের এই গরীব দেশ ছেড়ে উন্নত সভ্যতার নাগরিক হওয়াকেই জীবনের আরাধ্য মনে করে। যাহোক এটা যার যার ব্যাপার। 


এবার পোষ্ট প্রসঙ্গে আসি। প্রবাসে এসে সবসময়ই দেশের লোকজন/প্রতিষ্ঠান/ বাংলা লেখা খুজি। দেশের সম্পর্কিত কিছু পেলেই মনটা ভরে ওঠে, এই সুদূর প্রবাসে। গতবার ক্যাম্পাসের পাশে স্থানীয় লোকজনের এক বস্ত্রমেলার হঠাৎ চোখ আটকে গেল কয়েকটি ব্যাগে, দেখলাম ব্যাগের গায়ে বাংলায় বাংলাদেশ লেখা। বিক্রেতা জাপানীজ, জিজ্ঞাস করায় বলল বাংলাদেশ বেড়াতে গিয়ে কয়েকটি ব্যাগ কিনেছিলো, সেগুলোই বিক্রি করতেছে। বেশ ভালো লাগলো, নিজের মায়ের ভাষার লেখা দেখে। একটা প্রাপ্তিতে মনটা ভরে গেল, এই সুদূর থেকে।

পড়াশুনার সাথে সম্পর্কিত এমন কিছু ইন্ডাস্টিয়াল ভিজিটে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলাম ল্যাবমেট ও প্রফেসরের সাথে। সেসব বড় বড় কারখানার উৎপাদিত প্রোডাক্ট এর ক্রেতা বাংলাদেশ কিনা খুজতাম। কারন আমার ল্যাবমেট একজন ভিয়েতনামিজ আর একজন ইন্ডোনেশিয়ান, সবাই আমরা প্রায় একই স্ট্যান্ডার্ডের দেশ, তাই একটা মনস্তাত্বিক প্রতিযোগিতা কাজ করতো। তেমনি গিয়েছিলাম এবারা কর্পোরেশনে এরা গৃহস্থালি এবং বানিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত পাম্প এবং পাওয়ার জেনারেশন টারবাইন তৈরি করে। 
 

 

 

প্রথমে সারাবিশ্বব্যাপী ওদের শাখা সমূহ এর মাঝে বাংলাদেশ এর নাম না থাকায় হতাশ হলাম। কারন অন্য ল্যাবমেটদের মুখে তখন হাসির রেখা, কারন ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনামে এদের শাখা আছে। মনটা আরো খারাপ হলো যখন দেখলাম সামনের ফাইনাল ফিনিশং কৃত টারবাইন দু'টি ইন্দোনেশিয়ার জন্য।
 [ছবি গুগল থেকে, টারবাইন সেকশনে ছবি ঊঠানো নিষিদ্ধ, তাই তুলতে পারি নাই।]
নতুন পাওয়ার প্লান্ট করবে ইন্দোনেশিয়ায়, এজন্য এগুলো সামনের মাসে জাহাজে করে চলে যাবে। আমাদের দেশে সেই ব্রিটিশ আমলের বানানো সেই পাওয়ার প্লান্ট বার্ধ্যকের ভারে এখনও বিদ্যুত উতপাদনে ব্যবহার হচ্ছে। পাশের সেকশনে দেখলাম ইন্ডিয়ার জন্য কয়েকটি ইঊনিট এর কাজ চলছে।


এরপর গত শুক্রবার গিয়েছিলাম মিতসুবিসি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ, কানাগাওয়া ইয়কোহামা প্লান্ট এর উইন্ড টারবাইন সেকশনে। এলাহি কাজ কারবার। এই প্রথম খুব কাছে থেকে পাওয়ার জেনারেশনে ব্যবহৃত উইন্ড টারবাইন দেখলাম। মাথার উপড় বেশ শব্দ করে ঘুরছে, ঠিক নিচে একবার দাড়ালাম মাথার মাঝ বরাবর ব্লেড রেখে:P ভয়ও লাগছিলো যদি মাথা বরাবর নেমে পড়ে স্রেফ দু'ভাগ হয়ে যাব। যদিও সেই সম্ভাবনা নেই:D

 ছবি তোলা নিষিদ্ধ, এরপরও চুরি করে তুলেছিলাম। ভূমি থেকে হাব এর উচ্চতা ৭০মিটার, আর ব্লেড ৫০মিটার লম্বা। ক্যাপাসিটি ১০গিগাওয়াট/বছর। কোন পেরিমিটার না বদলিয়ে এটা চালাতে নূন্যতম ৩মি./সে. বেগের বাতাস লাগে।

এরপর গেলাম বানানো দেখতে। প্রথমেই বিশ্বব্যাপী এদের কার্য্যক্রম আর কোন দেশে কতটি ইউনিট বিদ্যুত উতপাদন করছে, ভারতে এদের তৈরিকৃত দুই শতাধিক ঊইন্ড টারবাইন চালু আছে। বাংলাদেশে এদের কোন সাপ্লাই নাই :((আমাদের দেশের ঊপকূলীয় অঞ্চলে বেশ সম্ভাবনা আছে, সাম্প্রতীক সন্দ্বীপে চালু হয়েছে।


এদের বানানো হেভী ক্যাপাসিটির ঊইন্ড টারবাইন যদি উপকূলীয় অঞ্চলে বসানো হয়, দেশে বিদ্যুত ঘাটতি অনেক কমে আসবে।


(২০শে জুন, ২০১০)
Share/Bookmark

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

^ Back to Top