শনিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১০

ফেলে আসা স্মৃতি-১

মানব জীবন বড়ই বৈচিত্রময়। কখন মনে যে কি উদয় হয় আর কি যে অস্ত যায়, বুঝা মুসকিল। প্রবাসে এসে ইদানিং মাঝে মাঝে শৈশবের স্মৃতিগুলো বেশ জোরালোভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মাঝে মাঝেই হারিয়ে যাচ্ছি সেই সোনালী ছেলেবেলায়। আর মনে হয় ঐ সময়টাকেই কোনভাবে যদি আটকে রাখা যেত? থাকতো না করুন বাস্তবতা, হা-পিত্যেশ, দৌড়াদৌড়ি--------খাবার সময় মা খাওয়াইয়া দিত, ঘুম পাড়িয়ে দিত---- আর এখন বাস্তবতার যাতাকলে পিষ্ট। চলছে রোবোটিক লাইফ। এই সিরিজে সেই পিচ্চিবেলার ঘটনাগুলো আপনাদের সাথে ধারাবাহিকভাবে লিখব ভাবছি----





শশা!!!☼


আমাদের বাড়ি গ্রামে হলেও বিশ্বরোডের একবারে সাথেই, সাথে রয়েছে শহুরে সুযোগ সুবিধা। ফলে গ্রাম-শহর দুটারই ছোঁয়া পেয়েছি। আমার আম্মা চাকুরিজীবি হলেও তার সাংসারিক কাজকর্মের একনিষ্ঠতা দেখলে আসলে গর্ব করার মত
(নিজের মা বলে আমি প্রশংসা করছি না), কারন চাকুরী সামলিয়ে উনি যেভাবে সাংসারিক কাজ-রান্নাবান্না-শাক সবজির গাছ লাগানো, পরিচর্যা- আত্নীয় স্বজনের ঝামেলা সামাল দেয়া, কিভাবে যে সামলান, আল্লাহ মালুম। ঘুমাতেন সবার পরে আবার উঠতেন সবার আগে। প্রতিদিন আব্বার জন্য স্কুলে যাবার আগে খাবার রেডি করা, অন্যন্য কাজ সামাল দিয়ে নিজের চাকুরীর কাজে বের হওয়া, সবকিছুই টাইম মত, আবার যখন যে শাক-সবজির সময় সেগুলোর বীজ রোপন করা, পরিচর্যা করা। আম্মার আবার গাছের হাত ভালো, মানে গাছ লাগালেই হত, অনেকে আছে, গাছ লাগালে হয় না, সেই হিসাবে আম্মার আবার বেশ যশ ছিল, অনেকে আবার আম্মার হাতে গাছ লাগিয়ে নিত!!! যা হোক আসল ঘটনায় আসি। আম্মা সবসময় শশার সিজনে বাড়ির উঠানে বা পেছবে শশার বীজ রোপন করতেন, মাঝে মাঝে আমিও আম্মার সাথে পরিচর্যায় অংশ নিতাম। আমাকে সারপ্রাইজ দিতে আম্মা একটা মজার কাজ করতেন, শশা গাছে ধরলে, পাতা দিয়ে লুকিয়ে রাখতেন, এরপর খাওয়ার উপযোগী হলেই আমার চোখ বন্ধ করে শশার গাছের কাছে নিয়ে গিয়ে চোখ খোলাতেন, আমিও নতুন কচি শশা দেখে সেই শিশুর স্বভাবসুলভ আনন্দে মেতে উঠতাম, এরপর---নিজ হাতে আমি ছিড়ে ----------------

সেইদিনগুলি আর নাই-------সময় চলে এখন কঠোর বাস্তবতায়। সেদিন ফোনে শুনলাম, আবারো শশা গাছে শশা ধরেছে, কিন্তু সেই আমি নাই----সময় বয়ে যায়, সেই সাথে বাস্তবতাও দুরে ঠেলে দেয়--------


ছবিঃ plantimpact.কম থেকে


(১১ জানুয়ারি ২০০৯)
Share/Bookmark

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

^ Back to Top