শুক্রবার, ৮ জুলাই, ২০১১

আম্রিকা ভ্রমনঃ পর্ব-০২

শুরু হলো নির্দিষ্ট দিন ক্ষনে আমেরিকার উদ্দেশ্যে যাত্রা। যাত্রী কোরিয়ান এয়ারলাইন্সের, জানালার পাশে সিট। বেশ আরামেই চলতে লাগলাম, প্রায় সাড়ে এগারো ঘন্টার বিরতীহীন যাত্রা। বিমানে  সিনেমার দেখে দেখে আগামী দিনের ভাবনা ভেবে ভেবে ঘুমে গেছিলাম ......জাগা পেলাম ডিনারের জন্য এয়ারহোষ্টের ডাকে। হালাল খাবারের কথা আগেই বলা ছিলো, কিন্তু কোরিয়ান এয়ারের দেয়া হালাল খাবার জঘন্য লেগেছিলো। পরিমানও সামান্য। মেজাজটাই খিচড়ে গিয়েছিল। যা হোক খেয়ে আবার সিনেমা দেখা শুরু করলাম। ঘন্টা তিনেক পর ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম। কারন ভোরের দিকে লসএঞ্জেলস এয়ারপোর্টে নামতে হবে, এর আগে একটু ঘুমানো দরকার। এয়ারপোর্ট থেকে আবার ট্রেনে যেতে হবে লং বীচে। সেখানেই আগে থেকেই একটা মোটেল বুক করে রেখেছিলাম। যাহোক সকালে সময়মত পৌছলাম লসএঞ্জেলস এয়ারপোর্টে। সেই থাকে আমেরিকায় পদার্পন করলাম। হ্যান্ড লাগেজ নিয়ে এগোতে থাকলাম ইমিগ্রেশনের দিকে। বেশ লম্বা লাইন। আমেরিকাদের লাইন বেশ হালকাই কিন্তু বিদেশীদের ৪টার মত লম্বা লম্বা লাইন। পরে কতিপয় অফিসার বিদেশীদের লাইন ভেঙ্গে আমেরিকানদের লাইনে দিলেন, সময় বাঁচানোর
জন্য, আমিও এর মাঝে পড়ে গেলাম। সব হাতের আঙ্গুল এর ছাপ আর ছবি উঠিয়ে বের হলাম ইমিগ্রেশন থেকে। এবার অন্য লাগেজটা নিতে বেল্টের কাছে গেলাম। এর নিয়ে কাষ্টম পার হতে গিয়ে অফিসার ডাক দিলেন, পাসপোর্ট দেখে বললো ব্যাগে কি আছে, সব শুনে বললো মিষ্টি নেই? আমি অবাক.........বললো বাংলাদেশ থেকে এসেছো আর মিষ্টি আনো নাই? আমি হেসে বললাম আমি বাংলাদেশী কিন্তু জাপান থেকে আমেরিকায় এসেছি কনফারেন্সে যোগ দিতে। পরে হেসে বললো আচ্ছা ঠিকাছে। বুঝলাম দেশী ভাই/বোনেরা ভালৈ মিষ্টি আনেন দেশ থেকে......... আর বেচারা অফিসার প্রতিনিয়ত দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, আর আমার কাছে নেই শুনে একটু অবাকই হয়েছে।

(মাঝে বিমান থেকে মেঘের কিছু ভিডিও করেছিলাম)
জাপান থেকে রওনা দেবার আগেই কিভাবে হোটেলে যাবো, আবার হোটেল থেকে কনফারেন্স এর অনুষ্ঠানস্থলে যাবো সবই আগে থেকে লোকেশন, রুট প্রিন্ট করে নিয়ে গেছিলাম। আমার ল্যাবের এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এর পিএইচডি আমেরিকা থেকে, সেও কিছু সহায়তা করেছিলো খুটিনাটি ব্যাপারে। সেই আমাকে লসএঞ্জেলস এয়ারপোর্ট থেকে মেট্রোরেলে লংবীচ যাওয়ার পথ বাতলে দেয়। আমি এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই এক চাইনীজ ট্যাক্সি ড্রাইভার জেকে ধরলো, সে নিয়ে যাবে কিন্তু যেহেতু নতুন আমাকে সে খাতির করে মাত্র ৩০ ডলারে নিয়ে যাবে.........! আমি আগে থেকেই জানি ট্রেনে গেলে মাত্র তিন ডলার লাগবে, ওর পীড়াপীড়িতে অতিষ্ট হয়ে বললাম, লোক আছে, সে আসলে যাবো। ব্যাটা খুব নাছোড়বান্দা ভাবছে, প্রথম এসেছে বেশ একটা দাও মারবে, শেষে বললাম দেখ, আমি জানি কিভাবে যেতে হয়, আমি মেট্রো ট্রেনে যাবো। বেচারা শুনে দমে গেলো, শেষে বললো, দেখো সমস্যা হলে আমাকে জানিও আমি আশেপাশেই আছি। শেষে এয়ারপোর্টের এক কর্মচারীর কাছে তথ্য নিয়ে পাশেই বাস ষ্টপেজে গেলাম শাটল বাস ধরার জন্য। এটা লসএঞ্জেলস এয়ারপোর্ট থেকে ২কিমি দুরের মেট্রোরেলের ষ্টেশনে নিয়ে যায়। ৫/১০ মিনিটেই পৌছে গেলাম। টিকেট মেশিনে দেড় ডলার এর টিকেট কেটে অপেক্ষায় রইলাম ট্রেনের। দেখলাম আহামরি কোন ট্রেন না, জাপানে যে রকম পরিপাটি ট্রেন, তেমন না, ভেতরেও কেমন রঙচটা ভাব। যাহোক মধ্যবর্তি একটা ষ্টেশনে নেমে গ্রীন থেকে ব্লু লাইনে গেলাম আবার দেড় ডলারের টিকেট কেটে লংবীচ এ আমার মোটেলের কাছাকাছি একটা ষ্টেশনে নামার জন্য। নামার পরপরই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। সব ব্যাগেজ নিয়ে ছাতা মাথায় দিয়ে গুগল ম্যাপ থেকে নেয়া প্রিন্ট দেখে দেখে হাঁটা শুরু কলাম। আমি নিজে খুঁজলেই মনে হয় আগে পৌছতাম, একেক জনের একেক নির্দেশনায় একবার একেবারে ঊল্টা দিকে রওনা দিছিলাম, সন্দেহ হলে আবারও জিজ্ঞেস করে বুঝলাম, যতদুর এসেছি ঠিকে বিপরীতে ঊল্টা হাঁটা দিতে হবে। কি আর করা, পরে ম্যাপে চোখ বুলিয়ে ঠিকমত এগোতে লাগলাম। এরপর দূর থেকেই দেখতে পেলাম মোটেলের সাইনবোর্ড। এদিকে ক্লান্তিতে নুয়ে আসছে শরীর। আনুষাঙ্গিক কাজের পর রুমের চাবি নিয়ে এগিয়ে গেলাম.........গোছল দিয়ে লম্বা জার্নি ক্লান্ত দূর করতে হবে......

চলবে......

Share/Bookmark

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

^ Back to Top