শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০১১

আম্রিকা ট্যুরঃ পর্ব-০৩

অনলাইনে বুকিং করেছিলাম টাওয়ার মোটেল, বেশ সস্তা এবং ছিমছাম, এক ভারতীয় দম্পতির এই মোটেল। কনফারেন্স লোকেশন থেকে দুই কিলো দূরে, বাসে এক ডলার আর হেঁটে ২৫মিনিট। ভারতীয় দম্পতির বলে ভাবছিলাম খাওয়াদাওয়ার হয়ত ব্যবস্থা আছে, কিন্তু আশায় গুড়ে বালি, ইমেইলেই জানিয়েছিলো এটার বিপরীত পাশেই আছে চাইনীজ রেষ্টুরেন্ট, সুতরাং চিন্তা নেই খাওয়া দাওয়ার। যাহোক রুমে প্রবেশ করেই মনটা ভালো হয়ে গেল, বেশ বড় রুম, আর খাটের দেখে মনে হলো সাঁতার কাটা যাবে। ৪জন অনায়াসে থাকা যাবে। প্রায়দিকেই গ্লাস লাগানো। বাথরুমটাও বেশ ঝকঝকে। রুমে নেট কানেকশনের ব্যবস্থা আছে, ওয়াইফাই দিয়ে স্পীড একটু কম, কিন্তু ক্যাবল দিয়ে বেশ ভালো স্পীড পেলাম। ফ্রেশ হওয়ার আগেই দেশে ফোন দিলাম যে পৌঁছেছি সমস্যা হয়নি। এরপর বাথরুমে গিয়ে লম্বা একটা গোছল দিলাম। এবার রুমের দিকে আরো ভালো করে তাকালাম। বেশ সস্তা দরের মোটেলে সুবিধাদি দেখে মুগ্ধই হলাম। টিভি-মিনি ফ্রিজ, টি-ব্যাগ, হেয়ার ড্রাইয়ার প্রভূতি। যা হোক গোছ গাছ করে বের হলাম আশেপাশের একটু দেখার জন্য। অবশ্য আসল উদ্দেশ্য ডাক্তারকে দেখানো। কারন গত বছর বেশ কমাস যাবত H.Pylori ব্যাক্টেরিয়ার ইনফেকশনে ভুগছিলাম। জাপানে ৩ কোর্সের ঔষধ খেয়ে না সারায় জাপানে ডাক্তার একটা লেটার ইস্যু করে দিয়েছিলো যদি সম্ভব হয় আমেরিকায় গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে আরো ভালো ঔষধ
নেওয়ার জন্য। মোটেল থেকে বের হতেই মোটেলওয়ালা বললেন আপনার কনফারেন্সে যোগ দিতে এক তাইওয়ানীজ এসেছে এই মোটেলে, আপনার সুবিধাই হবে, একসাথে মুভ করতে পারবেন। তাইওয়ানীজের সাথে পরিচিত হলাম, ব্যাটা আম্রিকা থেকে পিএইচডি করা, এখন তাইওয়ানে এসিঃ প্রফেসর। আগামীদিন থেকে কনফারেন্স শুরু তাই কখন বের হব, ঠিক করে আমি আশেপাশে ঘোরাঘুরি আর হাসপাতালে যাওয়ার জন্য হাঁটা শুরু করলাম। এই মুহুর্তে হাসপাতালের নাম মনে পড়ছে না, আগেই গুগলিং করে ম্যাপ প্রিন্ট করে নিয়েছিলাম, মনের সুখে হাটছি আর আম্রিকা দেখছি ;)


পথিমধ্যে দেখি রাস্তায় গাড়ী দুর্ঘটনা হয়েছে, আর হলিঊডি মুভির মত কালো পোষাক ধারী পুলিশ রাস্তা যান চলাচল নিয়ন্ত্রন করছে...... আশে পাশে কিছু ক্লাব/বার থেকে ............আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এখনও কিছু খাওয়া হয়নি, হাঁটার তালে মোটেলের পাশের চাইনীজ রেষ্টুরেন্ট ফেলে চলে এসেছি, তাই গেলাম পাশের এক মেক্সিকান ফুড ষ্টোরে, মাগার সব হ্যামে ভরপুর। আবার হাঁটা দিলাম, একটা বেকারী টাইপের দোকানে গিয়ে কেক নিলাম আর জুস। দুধের দাম দেখি জাপানের চেয়েও সস্তা। জাপানে এক লিটার গড় মানের দুধ দেড়শ ইয়েন, সেখানে এখানে এক গ্যালন দুধ মাত্র ৩.৮৪ ডলার। ফেরার পথে নিব, এই ভাবনার হাস্পাতালের উদ্দেশ্য হাঁটা দিলাম। মোটেলওয়ালা হাসপাতালের নাম শুনে বাস রুট বলে দিলো, আমি বললাম বেশি দূরে তো নয় আড়াই কিলো, আর আসলাম মাত্র হাঁটাও হবে, ঘোরাও হবে...... এখন হাঁটতে গিয়ে দেখি বিরক্তিই লাগছে। এর মাঝে উটকো ঝামেলায় পড়লাম নিগ্রোদের নিয়ে, দেখলেই কেমন যানি মুখের ভঙ্গি করছে। হয়ত বলছে পুরান পাগল ভাত পায় না নতুন পাগলের আমদানি =))

আরো একটু এগিয়ে যাবার পড় দেখা পেলাম হাস্পাতালের সাইনবোর্ড। কিন্তু আমি যেদিক দিয়ে গেছি এর প্রবেশ পথ পুরা এল এর মত অবস্থানে। কিন্তু পড়লাম রাস্তার ট্রাফিক সিগন্যালে, দেখি শেষ হয়না। অবশেষে গিয়ে পৌছলাম রিসেপশনে, নিগ্রো এক মহিলা ক্লোজআপ হাসি দিয়ে কারন জানতে চাইলেন। বললাম সংক্ষেপে, জাপান থেকে আজই এসেছি এক কনফারেন্সের জন্য, আমার শারীরিক সমস্যার জন্য হাই ডোজের যে মেডিসিন দরকার সেটা জাপানে নেই, ওখানকার ডাক্তার আমাকে এই লেটার দিয়েছে (হাতে থাকা ডাক্তারের ফরোয়ার্ডিং দিয়ে দিলাম) এখানে ডাক্তারকে দেখিয়ে ঔষধের ব্যবস্থা করা যাবে কিনা? এবার তাকানো দেখে মনে হলো মঙ্গলগ্রহ থেকে এসেছি। মাথা থেকে পা পর্যন্ত আর একবার দেখে একটা ফর্ম দিয়ে পুরুন করে জমা দিতে বললো। জমা দেবার পড় বললো ইন্সুরেন্স আছে, দেখালাম আসার আগে করা ট্রাভেল ইন্সুরেন্সের কপি। পরে ওটার কপি নিয়ে বললো তোমার ফরমে তোমার আম্রিকার স্থায়ী আবার লিখ নাই কেন? বলাল আসছি তো এক সপ্তাহের জন্য, আবাস বলতে সেই মোটেল, সব শুনে মনে হলো সেই মাইঙ্কার চিপায় পড়েছে উদ্ভট এই রোগীর কারনে। যাহোক অবশেষে সব ঝামেলা চুকে দেবার পড়, আমার হাতে একটা নাম্বার ট্যাগ পড়িয়ে দিলো, মনে হলো সদ্য জন্মানো বাচ্চাদের পায়ে যেমন ট্যাগ লাগানো হয় আমিও তেমনি। আমাকে ভেতরে নিয়ে গেল। রুমটা বেশ ছিমছাম। দুটা বেড আছে। এক্টায় এক নিগ্রো ছেলে আমার চেয়ে কয়েক বছরের জুনিয়র হবে, হাত ভেঙ্গে ব্যান্ডেজ নিয়ে বসে আছে। আমিও খালি বেডে বসে পড়লাম। এবার নিজেকে ফুল স্কেল রোগী মনে হচ্ছে, ভুলেই গেলাম কনফারেন্সে এসেছি, মনে হচ্ছে চিকিৎসার জন্যই এই আগমন।


সময় যায়, মাগার ডাক্তারের দেখা পাই না। ঘন্টাখানেক পড়ে পাশের রুমে নার্স্কে বললাম ডাক্তার কই? বলে ডাক্তার ব্যস্ত তোমার কাগজপাতি তার কাছে পাঠানো হয়েছে, অপেক্ষা করো। কিন্তু এই অপেক্ষার প্রহর আর শেষ হয়না। বিপরীত পাশের রুম থেকে আবার নতুন সমস্যা আমদানী হইছে, এক বৃদ্ধা গালাগালি করছে, পানি খাবে, কিন্তু কেউ তার কথা গায়ে লাগাচ্ছে না......বেশ উচ্চমার্গীয় কিছু গালী দেবার পড় এক ওয়ার্ডবয় এগিয়ে গেল, কি লাগবে শুনতে, বুড়ি দিলো আরো এক কড়া ঝাড়ি। যাহোক আবদার মেটানোর পড় বুড়ির চিল্লানী থামলো, কিন্তু আমার পেট মহাশয় চোঁ চোঁ করছে, এদিকে ডাক্তারেরও কোন খবর নেই। মেজাজই খারাপ হয়ে যাচ্ছে আসবে কখন। ভাবছি এখানে আসার আর সময় পেলাম না। তিনঘন্টা পার হয়ে গেল, এখনও ডাক্তারের দেখা নেই, মনে মনে ভাবছি চলে যাই.........

চলবে......

Share/Bookmark

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

^ Back to Top